রাত একটা-দুইটা-তিনটা বেজে যায়, তবুও ঘুম আসে না। এর কারণ কী?

ভালো ঘুম শান্তি ও সুস্থতার প্রতীক। সবারই রাতে কয়েক ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম কাম্য, তারপর সারা দিন ফ্রেশ থাকা; যাতে দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক বোধ হয়। অনেক সময় তাতে ব্যত্যয় ঘটতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, তিনজনের মধ্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ঘুমের সমস্যা থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ নির্দিষ্ট খাবার ও পানীয় এড়িয়ে যাওয়া এবং রাতে নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো।

অনিদ্রার ব্যাপারগুলো একটু ধাপে ধাপে বর্ণনা করি তবে-

অনিদ্রা কী?
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক যতটা ঘুম দরকার ততটা ঘুমাতে পারেন না।
অনিদ্রা হতে পারে-
- যথাসময়ে ঘুমাতে না যেতে পারা।
- ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি জেগে ওঠা।
- রাতে দীর্ঘ সময়ের জন্য জাগ্রত থাকা।
- রাতে ঘুমানোর পর সকালে ফ্রেশ বোধ না করা।

যদি অনিদ্রা একটি দীর্ঘ সময়কাল ধরে থাকে তাহলে এটি আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- দিনান্তে ক্লান্তি ও শক্তি হ্রাস, কম মনোযোগ, স্বাভাবিক কার্যক্রমে আগ্রহ হ্রাস, খিটখিটে মেজাজ, বিষন্নতা ও উদ্বেগ। এর ফলে দৈনিক স্বাভাবিক কার্যকলাপেও অক্ষমতা দেখা দেয়। ত্রুটিগুলো কর্মক্ষেত্রে বা ড্রাইভিংয়ের সময় ঘটতে পারে, যার ফলে গুরুতর পরিণতি আসতে পারে জীবনে এবং জীবনযাপনের মানও কমে আসে।

  • অনিদ্রার কারণ-
    কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও অনিদ্রা হতে পারে। যা হোক, কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে-
    সচেতনতা সম্পর্কে : অস্থায়ী সমস্যা- অনিদ্রা অনেক সময় অস্থায়ী হয়। এটা হতে পারে স্ট্রেস এর জন্য। পারিবারিক সমস্যার জন্য, রুটিন পরিবর্তন এর জন্য, নতুন শিশুর আগমন, অদ্ভুত বিছানা ইত্যাদি কারণে হতে পারে। উদ্বেগ বা বিষণ্যতা অস্থায়ী অনিদ্রার কারণ। আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও অফিসের সমস্যা বা আবেগের কারণ, যা বন্ধ করা কঠিন হয়ে যায়। আবার বিষন্নতার কারণেও অনিদ্রা হতে পারে। বিষণ্যতা বা উদ্বেগের চিকিৎসা প্রায়ই অনিদ্রার নিরাময় হয়।
  • বিভিন্ন অসুস্থতা অনেক সময় অনিদ্রার কারণ। উদাহরণস্বরূপ কিছু কিছু অসুস্থতা আছে, যা শরীরের ব্যথার কারণ, ল্যেগ কে ম্প শ্বাসকষ্ট, বদহজম, কাশি, চুলকানি, হট ফ্লাশ, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি ।
    উত্তেজক পদার্থ :
    - Alcohol
    - Caffine
  • Street Drug (Cocaine, গাঁজা) : ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি ঘুমানোর ১-২ ঘণ্টা পূবে ফোন,ল্যাপটপ ব্যাবহার আপনার ঘুমকে চরম ভাবে ব্যঘাত ঘটায়।
  • নির্ধারিত ওষুধ : কোনো কোনো মেডিসিনও নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পানি কমাতে Diuretic, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, স্টেরয়েড, ক্যাফিন ধারণকারী ব্যথার ওষুধ, ঠাণ্ডা প্রতিরোধক।
    স্কিন টাইম : কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে যারা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে তাদের রাতে অনিদ্রা হয়ে থাকে বেশি।
  • অবাস্তব প্রত্যাশা : কিছু মানুষের অন্যদের তুলনায় কম ঘুম প্রয়োজন। যদি ঘুমের প্যাটার্ন পরিবর্তিত না হয় তাহলে বয়স্ক ব্যক্তি এবং যারা সামান্য ব্যায়াম করেন, তাদের ঘুম কম হয়ে থাকে।
  • অনিদ্রার কিছু শ্রেণিবিন্যাস
    প্রাথমিক অনিদ্রা : যখন কোনো অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণ শনাক্ত করা যায় না। দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার পাঁচটি কারণের মধ্যে প্রাথমিক অনিদ্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
  • সেকেন্ডারি কারণ : অনিদ্রা যখন অন্য রোগের একটি লক্ষণ বা সাথে যুক্ত, এটি হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, ড্রাগ বা পদার্থের অপব্যবহার

ঘুমের স্বাভাবিক পরিমাণ কী?
বিভিন্ন মানুষের ঘুম বিভিন্ন পরিমাণে প্রয়োজন। কিছু লোক রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমানোর পর দিনে ক্লান্তি বোধ করে না। বেশির ভাগ মানুষের এর চেয়ে বেশি ঘুমের প্রয়োজন। প্রত্যেকের গড়ে ৬-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে স্বাভাবিক ঘুমের জন্য একটি প্যাটার্ন তৈরি করে থাকে। যা হোক, যখন আপনি বড় হচ্ছেন তখন স্বাভাবিকভাবে ঘুম কমতে থাকবে এটিই স্বাভাবিক।

তথ্য সূত্র:-নয়া দিগন্ত পত্রিকা।

Comments